রবিবার, ১১-মে ২০২৫, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে  লাভবান হচ্ছে চীন 

shershanews24.com

প্রকাশ : ১০ মে, ২০২৫ ০৬:২৮ অপরাহ্ন

শীর্ষ নিউজ, ডেস্ক:

কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত চীনের জন্য একটি সম্ভাব্য মূল্যবান গোয়েন্দা তথ্যের উৎস হয়ে উঠেছে। ভারতের সঙ্গে সংঘাতে চীনা যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করছে পাকিস্তান। এর মাধ্যমে চীন সেগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে। ভারতের সঙ্গে চীনেরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে।

নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, চীনের সামরিক আধুনিকীকরণ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা এখন সীমান্ত ঘাঁটি, ভারত মহাসাগরে মোতায়েন নৌবহর এবং মহাকাশ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের পদক্ষেপ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষক আলেকজান্ডার নিল বলেছেন, ‘গোয়েন্দা দৃষ্টিকোণ থেকে এটি (ভারত-পাকিস্তান সংঘাত) চীনের জন্য নিজেদের সীমান্ত ঘেঁষে একেবারে অপ্রত্যাশিত এক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, যেখানে তাদের একটি সম্ভাব্য প্রধান প্রতিপক্ষ জড়িত।’
দুই মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, চীনের তৈরি জে-১০ নামে একটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভারতের অন্তত দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারতের ওই দুই যুদ্ধবিমানের একটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল। 

ভারত তাদের কোনো যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার কথা এখনো স্বীকার করেনি। তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করার কথা নিশ্চিত করেছেন; যদিও ভারতের বিরুদ্ধে সংঘাতে কোন কোন ক্ষেপণাস্ত্র বা কী কী অস্ত্র ব্যবহার করেছেন, সে বিষয়ে কিছু জানাননি।

নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, চীনের সামরিক আধুনিকীকরণ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা এখন সীমান্তঘাঁটি, ভারত মহাসাগরে মোতায়েন নৌবহর এবং মহাকাশ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের পদক্ষেপ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।

আকাশযুদ্ধ সব দেশের সামরিক বাহিনীর জন্যই বিরল এক সুযোগ। আকাশযুদ্ধের মাধ্যমে তারা বৈমানিক, যুদ্ধবিমান এবং সক্রিয় যুদ্ধে আকাশ থেকে আকাশে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র কতটা কার্যকর, তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং সেখান থেকে পাওয়া জ্ঞানের আলোকে নিজেদের বিমানবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে পারে।

প্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক পরাশক্তি ও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও চীনকে দীর্ঘদিন ধরেই কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়। দুই দেশের মধ্যে হিমালয় অঞ্চলে ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ১৯৫০–এর দশক থেকে সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে এবং ১৯৬২ সালে চীন ও ভারত একবার সংক্ষিপ্ত সংঘাতে জড়িয়েছিল।

চীন-ভারত সীমান্তে সর্বশেষ অচলাবস্থার সূত্রপাত হয়েছিল ২০২০ সালে। ওই অচলাবস্থা কিছুটা প্রশমিত হয় গত অক্টোবর মাসে, যখন উভয় পক্ষ সীমান্তে টহলসংক্রান্ত এক চুক্তিতে পৌঁছায়।

                                   ‘মহাকাশে এবং ক্ষেপণাস্ত্র অনুসরণের ক্ষেত্রে চীন এখন অনেক শক্তিশালী। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তারা সেগুলোর ওপর নজরদারি করতে সক্ষম...’
                                                                                                                                                     আলেকজান্ডার নিল, হাওয়াই প্যাসিফিক ফোরাম থিঙ্কট্যাংকের সহযোগী গবেষক

প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, উভয় পক্ষই সীমান্তজুড়ে নিজেদের সামরিক স্থাপনা ও সক্ষমতা জোরদার করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও এর বাইরে চীন আকাশ থেকে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের ওপরও অধিক গুরুত্ব দেয়।

লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে চীনের ২৬৭টি স্যাটেলাইট কার্যকর রয়েছে। এর মধ্যে ১১৫টি গোয়েন্দা নজরদারি ও পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। আরও ৮১টি সামরিক ইলেকট্রনিক ও সিগন্যাল তথ্য পর্যবেক্ষণ করে।
আকাশযুদ্ধ সব দেশের সামরিক বাহিনীর জন্যই বিরল এক সুযোগ। আকাশযুদ্ধের মাধ্যমে তারা বৈমানিক, যুদ্ধবিমান এবং সক্রিয় যুদ্ধে আকাশ থেকে আকাশে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র কতটা কার্যকর, তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং সেখান থেকে পাওয়া জ্ঞানের আলোকে নিজেদের বিমানবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে পারে।

এটি এমন একটি স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক, যা ভারতসহ আঞ্চলিক সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে অনেকটা পেছনে ফেলে দিয়েছে চীন। এখন সক্ষমতার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরই চীনের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের অবস্থান।
হাওয়াই প্যাসিফিক ফোরাম থিঙ্কট্যাংকের সহযোগী গবেষক নিল বলেন, ‘মহাকাশে এবং ক্ষেপণাস্ত্র অনুসরণের ক্ষেত্রে চীন এখন অনেক শক্তিশালী। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তারা সেগুলোর ওপর নজরদারি করতে সক্ষম।’

সামরিক স্যাটেলাইট এবং তাদের গোয়েন্দা নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন করতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।

চীনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং এবং তথ্যমন্ত্রীও তাৎক্ষণিকভাবে কথা বলতে রাজি হয়নি।

তবে পাকিস্তান এর আগে বলেছিল, চীনের সঙ্গে তাদের একটি ‘সর্বাত্মক কৌশলগত, সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব’ রয়েছে।

ভারতও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী গত বৃহস্পতিবার স্কাই নিউজকে বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিয়ে ভারতের মাথাব্যথা নেই।

দোরাইস্বামী বলেন, ‘চীনের জন্য তার সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন, যার মধ্যে আমরাও অন্তর্ভুক্ত।’

শীর্ষ নিউজ /মৌসুমী খানম